তুহিন দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকেই বললো,,, (হাতে একটা সাদা কাগজ)
(আয়নার দিকে মুখ করে নিপা বসা, দরজার শব্দ শুনে ঘুরে তাকিয়ে)
"তুমি মোর জীবনের ভাবনা
হৃদয়ের সুখের দোলা
নিজেকে আমি ভুলতে পারি
তোমাকে যাবে না ভোলা"
ভেবেছিলাম গানটা চিঠিতে লিখে তোমাকে দিবো লিখেছিও কিন্তু পরে ভাবলাম চিঠিত সবাই দেয় তাই সামনা সামনি এসেই বলছি ,,,
কি??
তোমার ইমো চেক করো
(নিপা গানটা দেখা ও শোনার পর)
ভালই তো গাইছিস।গান কভার করা শুরু করলি নাকি?
না, একজনকে ভালোবেসে গানটা গাইছি। কিন্তু তাকে বলতে পারছি না ।
(নিপা নিজের জন্য মনে করে একটু খুশি খুশি ভঙ্গিতে তাকিয়ে)
তাই কে সে মেয়ে শুনি?
আছে ,একজন তার সাথে আমার ৫ বছরের বন্ধুত্ত্ব।
কি বলিস।তাহলে বলিস নাই কেন এতদিন?
আরে কিভাবে বলব একে তো ফ্রেন্ড আবার তার মধ্যে আমি বেকার। তাই সাহস পাই নাই।
দেখ তুহিন তোর সাথে আমার ৫ বছরের ফ্রেন্ডশিপ তুই প্রেমে পড়ছিস আর আমি জানি না বিষয়টা মেনে নিতে পারলাম না ।
দোস্ত বলতে চাইছি তোরে, কিন্তু বলি নাই রে। বেকারদের প্রেম করা মানায় না।
আজকে আমার বিয়ে আর তুই ড্রেসিং রুমে এসে এসব কথা বলতাছস। যাক ভালই হল। তুই বিয়া কর পরে তোর বিয়েটাও খাওয়া যাবে। সেই নাঁচমু তোর বিয়াতে। আর শোন তোর বিয়ার শপিং কিন্তু আমি করবো। খুব মজা করব বুঝছিস। বেস্ট ফ্রেন্ডের বিয়ে বলে কথা।
দোস্ত তোর মজা করাটা হইতো আর হবে নারে। কারণ ওরও বিয়ে হতে চলেছে
মানে কি কবে ?
আজকেই বিয়ে হয়ে যাচ্ছে ওর।
ওকি জানে তুই ওকে ভালবাসিস?
না,জানে না ,জানাতেই তো এসেছি।
ওয়েট ওয়েট , আজকে তো আমারও বিয়ে,আমার সাথেও তোর ৫ বছরের ফ্রেন্ডশিপ। তুহিন আমার দিকে তাকা। বাই এনি চান্স তুই কি আমার কথা বলছিস?
হ্যাঁ, নিপা আমি তোর কথাই বলছি। আমি তোকেই ভালোবাসি।
আজব তো !! আজকে আমার বিয়ে, তুই আজকে কেনো বলতেছিস। এই টা পসিবল না। আর তাছাড়া আমি যখন তোকে নানা ভাবে বুঝাইতাম তখন কেনো বলিস নাই। । সবাই জানত যে আমি তোকে ভালোবাসি শুধু তুই ছাড়া।
সারা কলেজ জানত আমরা কাপল। বাট সত্যিটা ছিল আমরা ভালো ফ্রেন্ড ।
দোস্ত আমি কনফিউজড ছিলাম। আমি একটা গাধা তখন বুঝতে পারি নাই যখন তুই কাছে ছিলি । তোকে শেষ দেখেছি ৭ দিন হল । ৭ দিন আগে তুই যখন তোর বিয়ের কার্ডটা আমার হতে দিলি। তখনই আমি আর মেনে নিতে পারছিলাম না। তুই আমার থেকে দূরে চলে যাবি। সব সময় তুই আমার পাশে ছিলি তুই দূরে যাওয়ার পর বুঝতে পারছি তোকে কতটা প্রয়োজন। তুই কাছে না থাকলে আমি শুধু তোর কথাই ভাবি । এটা ভালোবাসা ছাড়া আর কি।
আমি জানতাম তুই এরকমি একটা কান্ড ঘটাবি। তুই জীবনেও একটা কাজ ঠিক মত করতে পারস নাই। ভার্সিটিতেও তোর নোটস আমি করে দিতাম। আমার জন্যই তুই এতদূর আসছস । তুই কবে শুধরাবি বল । একটু পর আমার বিয়ে এখন আমি কি করব?
আমি তোকে নিয়ে যেতে এসেছি। আমার সাথে চল,,
একটা সত্যি কথা কি জানিস । আমি শাড়ি পারছিলাম আর তোর কথাই ভাবছিলাম । বর হিসেবে শুধু তোর মুখটাই ভাসছিল। আমার শুধু মনে হচ্ছিল তুই এসে আমাকে নিয়ে যাবি ।
দেখ নিপা তুই আমার সাথে সেট আর আমি তোর সাথে। আমি তোকে বুঝি আর তুই আমাকে।
না রে, অনেক দেরি করে ফেলেছিস এখন আর সম্ভব না। মা,বাবাকে কষ্ট দিয়ে আমি কোথাও যেতে পারব না। যদিও আমার হাজবেন্ডের বয়স একটু বেশি তারপরও ওনাদের পছন্দই আমার পছন্দ। তাছাড়া বিয়ের পর আমাদের কানাডায় সেটেল হওয়ার কথা।
একটু বেশি!!! তোর থেকে ১৫ বছরের বড়।
তো কি করব এখন সব কিছু ভুলে তোর সাথে পালিয়ে যাবো। কারণ এত দিন পর তুই বুঝতে পারছিস আমাকে তোর প্রয়োজন। বাবা এই কষ্টটা মেনে নিতে পারবে না। আর তোর সাথে আমি কই যাবো? তুই আমাকে কই রাখবি তোর ওই মেছে?
না, তোর হাতটা দে
কেন?
দে তারপর বলছি
(তুহিন তার হাতের কাগজটি নিপার হতে এগিয়ে দেয়)
নিপা:( কাগজটি খুলে দেখে appointment letter।)
তুই!! তুই চাকরি পেয়েছিস ? ( আশ্চর্য হয়ে)
চাকরিটা আমার হয়ে গেছে রে । তোর জন্যই অনেক কষ্টে চাকরিটা জোগাড় করেছি। কোম্পানির সবচেয়ে জুনিয়র পজিশন । ২০ হাজার টাকা বেতন ছয় মাস পর আরো বাড়বে। একটু কষ্ট হবে চলতে কিন্তু মানিয়ে নেয়া যাবে ।
আমি তোর চাকরিরও অনেক অপেক্ষা করছিলাম। আমি তো পুরো তোর জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। সবি হল কিন্তু এখন আর সেই সময়টা নেই। একটু পর আমি বিয়ের পিড়িতে বসবো এত লোকজন আত্মীয় স্বজনদের সামনে রেখে কিভাবে যাবো। আমি পারবো না, তুই চলে যা।(নিপার চোখ টলমল করছে)
নিপা আমি তোকে ভালবাসি আর তুই আমাকে । আমার ছোট বেলায় মা মারা গেছে।তাই আমি মায়ের স্নেহ তেমন পাই নি । আমি মায়ের পর তোকেই সবচেয়ে বেশি আপন ভেবেছি। তুই কি আমার অগোছালো জীবনটাকে গুছিয়ে দিতে আসবি না? সেই ছোট বেলায় মায়ের সাথে শেষ বৃষ্টিতে ভিজে ছিলাম। তোকে নিয়ে একসাথে বৃষ্টিতে ভিজতে চেয়েছি। তুই কি আমার হাত ধরে একসাথে বৃষ্টিতে ভিজবি?
(এই বলে তুহিন হাঁটু গেড়ে নিপার হাত ধরে)
আমি তোকে খুব ভালবাসিরে। তোকে আমার খুব প্রয়োজন। I love you . Will you be my life partner?
(নিপা কি করবে এখন ? বাবা মায়ের সিদ্ধান্ত মেনে নিবে নাকি মায়ের স্নেহ থেকে বঞ্চিত তুহিনের হাত ধরে চলে যাবে।।। )
মেয়েরা অনেক বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অনেক কান্না করে।নিপার চোখে জল পড়ছে সে অনেকক্ষন হলো ( তুহিনের হাত ধরে) ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদছে। এবং সে একবার পিছনের দরজার দিকে তাকালো,,,,,,
..............................................
1 Comments
Darun. Oshadharon
ReplyDelete